প্রথম আলো: সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রিয়া সাহার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনার মধ্যেই তাঁর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের নির্যাতিত, বিপন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েছেন প্রিয়া সাহা, যাতে সংখ্যালঘুদের আর দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করতে না হয়। এই সত্য বলায়, বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে’ বিচারের দাবি উঠেছে, মামলা হয়েছে। কুরুচিপূর্ণ বিভিন্ন মন্তব্যের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যা বলেছেন, তাকে সর্বাংশে সত্য বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সভাপতিমণ্ডলী ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রিয়া সাহা তো মিথ্যাচার করেননি। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোনো বিচার হয় না, তাই তিনি সাহায্য চেয়েছেন। নিজের মাতৃভূমিতে মানবাধিকার ও সম-নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাসের অধিকার লঙ্ঘিত হলে, ন্যায়বিচার না পেলে, তা বহির্বিশ্বকে অবহিত করাটাই স্বাভাবিক, যেমনটা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ করে থাকেন। আর, সেটা তো কোনো অপরাধই নয়; রাষ্ট্রদ্রোহ বলা তো হাস্যকর ব্যাপার।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য এবং অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া মানুষের পরিসংখ্যান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে এর সবই মনগড়া, মিথ্যা। প্রিয়া সাহা দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যাটা সম্ভবত ভুল করেই অনেক কম বলেছেন। বাস্তবে অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, বলা হচ্ছে তিরিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যাবে।’
বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, ‘আমাদের বিনীত জিজ্ঞাসা একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হলো কেন? হাজার হাজার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ মিছিল নিয়ে সংখ্যালঘুদের গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে কেন? যারা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে তাদের বিচার হয় না কেন? দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ফাউন্ডেশন হলো না কেন? পার্বত্য চট্টগ্রামে দখলদার পাঠিয়ে ওদের সেখান থেকে উৎখাত করা হলো কেন? পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন আজও হলো না কেন? এগুলো কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন? সত্যকে ঢেকে রাখার কোনো উপায় নেই। ক্ষমতায় যে সরকারই থাকুক না কেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন চলেছেই। প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার হয় না। নির্যাতকেরা শুধু “রাজনৈতিক আশ্রয়ই” পায় না, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ওই সব ধর্ষক খুনিদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে, তাদের মন্ত্রিত্ব দেয়। তাই, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত ঘোষণা করছে।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, দেশে সরকার ও সরকারের বাইরে অনেক তথাকথিত মুক্তচিন্তার দাবিদাররাও প্রিয়া সাহাকে “রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে” বিচারের দাবি তুলছেন। জাতির কপাল ভালো, আমাদের একজন প্রাজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। অতি উৎসাহী, অজ্ঞ ও সাম্প্রদায়িক মামলাবাজদের করা মামলাগুলো বাতিল করায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। পরিশেষে, আমরা বলতে চাই, সত্যকে অস্বীকার না করে, প্রিয়া সাহা ও তাঁর পরিবারকে হয়রানি না করে, আসল সমস্যার সমাধান করা শ্রেয়।’
বিবৃতিটিতে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পরিচালনা পর্ষদের নবেন্দু দত্ত, টমাস দুলু রায়, রনবীর বড়ুয়া, বিদ্যুৎ দাস ও ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য।