ব্যর্থতা আড়াল করতে বিরোধী দলকে দোষারোপ
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর: গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি ও ডেঙ্গু নিয়ে বিএনপিকে জড়িয়ে মন্ত্রী ও পুলিশের যে বক্তব্য এসেছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ডেঙ্গু নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং মানুষ পিটিয়ে মারা গুজব নিয়ে পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারীর বক্তব্যের জবাবে খুলনায় বিএনপির সমাবেশে তিনি বলেন, এর মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীনরা তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চায়।
ফখরুল বলেন, “কোনো কিছু ঘটলেই তারা বিরোধী দলের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়। এটি সম্পূর্ণ তাদের ব্যর্থতা।”
তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ আগে একটা কার্টুনে দেখলাম যে, ডেঙ্গু ও পিটিয়ে মরার ভয়ে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষকে একটা পুরোপুরি অনিরাপদ ও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে ফেলা হয়েছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এই সরকার লুটপাট করছে, দখল করছে, তারা গুলি করে মানুষ মেরেছে। এখন মশা দিয়ে মানুষ মারছে।”
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বরিশাল ও চট্টগ্রামের পর খুলনার এই সমাবেশ করেছে বিএনপি।
নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এই সমাবেশে যশোর, নড়াইল, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট জেলা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের সময়ে এই মাঠে সমাবেশে খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরপর এই মাঠে বিএনপির কোনো সমাবেশ হয়নি।
সমাবেশে ফখরুল দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে নেতা-কর্মীদের ভেদাভেদ ভুলে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান।
বন্যার কারণে বিভাগীয় অন্য সমাবেশগুলো স্থগিত করার কথা জানিয়ে তিনি এখন বানভাসিদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন।
বৈরী আবহাওয়া ও সরকারের বাধা ডিঙ্গিয়ে সমাবেশ ব্যাপক উপস্থিতির জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে খুলনার নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান বিএনপি মহাসচিব।
খুলনার এই সমাবেশে পাটকল শ্রমিকদের চরম দুরবস্থার বিষয়টি স্মরণ করে তাদের ন্যায্য মজুরি কাঠামোর দাবি মেনে নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
প্রিয়া সাহাকে নিয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য দাবি
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা পত্রিকায় পড়েছি, প্রিয়া সাহা নামে একজন ভদ্রমহিলা ওয়াশিংটনে কী বক্তব্য দিয়েছেন, যে বক্তব্যে আওয়ামী লীগের লোকেরা নিজেরাই ক্ষুব্ধ হয়ে গেছেন।
“প্রথম দিন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন যে, তার (প্রিয়া সাহা) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত। এর পরের দিন উনি বললেন, না, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেয়া উচিৎ। তিনি (প্রিয়া সাহা) আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। যে টেলিফোন কনভারসেশন বেরিয়ে এসেছে, সেখানে তিনি বলেছেন, এটা তো আমার কথা নয়, এটা প্রধানমন্ত্রীর কথা।
“আমরা জানতে চাই, দেশবাসী জানতে চায় কোনটা সত্যি? এটা কি প্রধানমন্ত্রীর কথা, না কি প্রিয়া সাহার কথা। আমরা জানতে চাই, এই চক্রান্ত কিসের চক্রান্ত? জাতীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বলা হচ্ছে সেই আন্তর্জাতিক চক্রান্তটা কী?”
ভারতীয় হাইকমিশনারের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, “ভারতীয় হাইকমিশনারের একটা বক্তব্য দেখলাম কালকে, উনাকে সন্মান জানিয়ে বলব, তিনি বলেছেন ভারত ও বাংলাদেশের সরকার না কি বিপুল বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করেছে।
“বাহ! ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর বিজয় আর শেখ হাসিনার বিজয় আপনি এক মাপকাঠিতে মাপলেন। সেই কারণে বলব, আপনারা বিদেশিরা যারা এই হাসিনা সরকারকে যত বৈধতার সার্টিফিকেট দেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভাগ্য পূরণ করবে। যে দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে পারে, তারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবে।”
‘ঐক্যফ্রন্টও আছে, ২০ দলও আছে’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে চিড় ধরার কথা অস্বীকার করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, তাদের সব জোটে ঐক্য অটুট রয়েছে।
তিনি বলেন, “কিছু সংখ্যক মহল অত্যন্ত উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে যে, বিএনপি যে মিটিং-টিটিং করছে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য করছে।
“আমরা পরিষ্কার ঘোষণা দিতে চাই, ২০ দল ঠিক আছে, ঐক্যফ্রন্টও ঠিক আছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারকে পরাজিত করব, নেত্রীকে মুক্ত করব।”
গয়েশ্বর বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির চেয়েও জরুরি হয়ে গেছে এই সরকারের পতন। তাদের পতন হলেও দেশনেত্রীর মুক্তি হবে, গণতন্ত্রের মুক্তি হবে, মানুষের জীবন নিরাপদ হবে।”
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নজরুল ইসলাম খান, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, কবীর মুরাদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সোহরাবউদ্দিন, আজিজুল বারী হেলাল, আসাদুজ্জামান, শামীমুর রহমান শামীম, রফিকুল ইসলাম বকুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নেওয়াজ হালিমা আরলি, অমলেন্দু অপু, জয়ন্ত কুমার কুন্ড, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনোয়ার হোসেইন, সুলতানা আহমেদ, মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জু্য়েল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, একেএম ওয়াজেদ।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে এবং খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানের পরিচালনায় সমাবেশে
খুলনার এসএম শফিকুল আলম মনা, গাজী আব্দুল হক, সাহারুজ্জামান মোত্তর্জা, যশোরের বিলকিস ইসলাম, বাগেরহাটের এম এ সালাম, সাতক্ষীরার রহমতউল্লাহ পলাশ, নড়াইলের বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন জেলার নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
এই সমাবেশে মাসুদ অরুন, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মজিবুর রহমান, টিএস আইয়ুব, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত শায়রুল কবির, ইয়াসীন আলী উপস্থিত ছিলেন।